ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘৬ষ্ঠ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিতর্ক উৎসব ২০২৫’-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার নদী রক্ষার জন্য সরকারের সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশেষভাবে প্রশ্ন তুলেছেন, নদীর ওপর নির্মিত বড় সেতুগুলোর প্রভাব কী হবে, এবং এর ফলে নদীগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে কিনা।
ফরিদা আখতার বলেন, “পদ্মা সেতু কি পদ্মা নদীর জন্য ক্ষতিকর নয়? যমুনার ক্ষতি তো আগেই হয়ে গেছে। এখন শোনা যাচ্ছে, বরিশাল থেকে ভোলা পর্যন্ত আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপরও সেতু নির্মাণ হবে। এভাবে নদীর ক্ষতি করা অন্যায়।”
তিনি আরও বলেন, নদী দূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবনযাত্রার ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিশেষভাবে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীকে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “বুড়িগঙ্গার পানির দুর্গন্ধ এতটাই প্রবল যে, লঞ্চে যাত্রীরা ঢাকায় পৌঁছানোর আগে সঠিকভাবে টিকতে পারে না। অথচ, ওই এলাকার মানুষজন এই পরিবেশে বসবাস করছে।”
ফরিদা আখতার তরুণ প্রজন্মের কাছে নদী রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নদী শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এটি আমাদের জীববৈচিত্র্য এবং মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদী শুকিয়ে যাওয়া, মরে যাওয়া—এসবই অনৈতিক কাজের ফল।”
ফরিদা আখতারের বক্তব্যে উপস্থিত দর্শকের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও নদী গবেষক শেখ রোকন। তিনি মন্তব্য করেন, “সব ধর্মেই নদীকে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে। নদী শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের প্রতীক।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, “নদী আমাদের আশীর্বাদ। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে নদীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর।”
এছাড়া, অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিতর্ক উৎসবে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় দল অংশগ্রহণ করে, যেখানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের দল চ্যাম্পিয়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দল রানারআপ হয়।