কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত। হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত গত রাতে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ নামের একটি সামরিক অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ভারতের মতে, এই হামলা শুধুই সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান একে আখ্যা দিয়েছে “যুদ্ধ ঘোষণার সামিল”, এবং বলেছে যে বেসামরিক নাগরিকরা এই হামলার শিকার হয়েছে।
ভারতের অবস্থান: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে টার্গেটেড অ্যাকশন
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,
“অপারেশন সিঁন্দুর’ মূলত পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে চালানো হয়েছে। এগুলো ছিল এমন স্থাপনা, যেখান থেকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন হচ্ছিল। এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত, পরিমিত এবং সুনির্দিষ্ট। এটি কোনও সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেনি এবং একে উস্কানিমূলক বলা চলে না।”
ভারতের এই অবস্থান অনুযায়ী, এটি একটি আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ — একধরনের প্রতিরোধমূলক অভিযান যা সরাসরি সামরিক যুদ্ধ নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট জবাব।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: ‘অ্যাক্ট অফ ওয়ার’, প্রতিশোধ আসবেই
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের এই হামলাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেন,
“পাকিস্তানের পাঁচটি জায়গায় কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে শত্রুপক্ষ। এটি একটি স্পষ্ট ‘অ্যাক্ট অফ ওয়ার’। প্রতিশোধ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে এবং আমরা সেই অধিকার প্রয়োগ করব। পাকিস্তানের জনগণ ও সেনাবাহিনী একতাবদ্ধভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত।”
এক্স প্ল্যাটফর্মে (পূর্বতন টুইটার) তিনি আরও লিখেছেন,
“আমরা শত্রুরা যেন সফল না হতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করব। পাকিস্তান জানে কীভাবে নিজের রক্ষা করতে হয়।”
বিলাওয়াল ভুট্টো: ‘যুদ্ধ চাপালে জবাব আসবেই’
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন,
“ভারতের কাপুরুষোচিত আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাই। পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এবং বেসামরিক এলাকায় এই হামলা আন্তর্জাতিক নিয়মের পরিপন্থী। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে এর জবাব দিচ্ছে এবং এই ধরণের কোনও দুঃসাহসিক কাজ বরদাস্ত করা হবে না।”
তিনি বলেন, পাকিস্তান একতাবদ্ধ, সঙ্ঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে এবং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি জনগণও সরকারের পাশে আছে।
সরকারি মুখপাত্রদের ভাষ্য: বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ভারত
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার অভিযোগ করেছেন,
“ভারত শুধু সন্ত্রাসী ঘাঁটিই নয়, বরং বেসামরিক স্থাপনাও লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ বেপরোয়া এবং অনাকাঙ্ক্ষিত একটি হামলা।”
তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া এখনো চলছে এবং স্থল ও আকাশপথে পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বরাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে,
“ভারতীয় সেনাবাহিনী তিনটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সীমান্তে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।”
পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিতরা জানিয়েছেন, হামলাটি অত্যন্ত পরিকল্পিত ছিল এবং ভারত সরকার অভিযোগ করে, এর পেছনে পাকিস্তানি গোষ্ঠীর মদত ছিল। যদিও পাকিস্তান সরকার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একে ‘ভারতের ভিত্তিহীন প্রচারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান — উভয় দেশের বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্টতই চরমে পৌঁছেছে। একদিকে ভারত বলছে, এটি শুধুই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা; অন্যদিকে পাকিস্তান একে যুদ্ধ ঘোষণা বলে মনে করছে এবং পাল্টা জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
উপমহাদেশে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা গোটা অঞ্চলের জন্যই মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।