পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের একাধিক স্থানে ভারতের সামরিক বাহিনীর চালানো ‘অপারেশন সিন্দুর’ ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে। গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কী ঘটেছে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ?
বুধবার রাতভর ভারতের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালায়। ভারত সরকারের দাবি অনুযায়ী, এইসব জায়গায় সক্রিয় ছিল সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, অভিযানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং সন্ত্রাসী পরিকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
পাকিস্তানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও অনেকে। পাকিস্তান পাল্টা কামান হামলা চালায়, যেখানে ভারত জানিয়েছে তিনজন ভারতীয় নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান আরও দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।
অপারেশনের নাম ও প্রতীক: ‘সিন্দুর’
এই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিন্দুর’ ঘিরেও symbolism বা প্রতীকী বার্তা স্পষ্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে অপারেশনের নামের মধ্যেই দুটি ইংরেজি ‘O’-এর মধ্যে একটিতে লাল সিঁদুরভর্তি একটি গোল কৌটো দেখানো হয়েছে।
সিঁদুর হিন্দু বিবাহিত নারীদের একটি সাংস্কৃতিক চিহ্ন, যা নারীরা তাদের সিঁথিতে পরিধান করে থাকেন। ঘটনাচক্রে পহেলগামে নিহতদের প্রায় সকলেই ছিলেন হিন্দু পুরুষ — ফলে এই নামকরণে সাংস্কৃতিক ও আবেগঘন বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিজেপি নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া
এই অভিযানের পরপরই ভারতের শাসক দল বিজেপির শীর্ষ নেতারা সেনাবাহিনীর প্রশংসা ও সরকারের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন:
“পহেলগামে আমাদের নিরীহ ভাইদের নির্মম হত্যার প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানে এই হামলা চালানো হয়েছে।
মোদী সরকার ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন:
“ভারত মাতা কি জয়।”
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সংক্ষিপ্ত বার্তায় লেখেন:
“জয় হিন্দ, জয় হিন্দ-এর সেনা।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান আরও বলেন:
“ভারত মাতা কি জয়, জয় হিন্দ-এর সেনা।”
জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপি নেতা আলতাফ ঠাকুর বলেন:
“এই অপারেশন সিন্দুরে নয়টি স্থানে সন্ত্রাসবাদীদের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।”
বিরোধী দলগুলোর অবস্থান
বিরোধী দলগুলো এই অপারেশন নিয়ে সরকারকে প্রশ্ন না করে সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন:
“আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি গর্ব হচ্ছে। জয় হিন্দ।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে লিখেছেন:
“এই সময় আমাদের সবার উচিৎ জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা। পহেলগামের ঘটনার পর থেকেই কংগ্রেস সরকারের পাশে থেকেছে, এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপের সমর্থন করেছে।”
এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি অপারেশন সিন্দুরকে “সার্জিকাল স্ট্রাইক” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন:
“পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযান অত্যন্ত জরুরি ছিল।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন:
“জয় হিন্দ, জয় ইন্ডিয়া।”
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
ভারতের এই জবাবি হামলা আন্তর্জাতিক পরিসরেও গুরুত্ব পাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনার পারদ যে আবারও চড়ছে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
তবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষই যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট, তা এই অপারেশনকে ঘিরে প্রতিক্রিয়াগুলো স্পষ্ট করেছে।
এই ঘটনার পর ভারতের ভবিষ্যত কৌশল কী হবে — বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো — তা এখন আগামি ক’দিনের রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে।